বাতের ব্যথার জন্য হলুদের ব্যবহার সত্যি কি খুব লাভজনক ?
সমাজের বহু সংখ্যক মানুষ, বিশেষত যারা বয়স্ক তাদের ক্ষেত্রে বাতের সমস্যা একটা খুব সাধারন সমস্যা। বাতের সমস্যা আমাদের জীবনযাত্রার গুণগত মানকে অনেকটাই প্রভাবিত করতে পারে । বহু ওষুধ পথ্য এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত করা সত্ত্বেও বাতের ব্যথা যেন কিছুতেই আমাদের ছেড়ে যেতে চায়না ।
আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বাতের ব্যথায় হলুদ ব্যবহারের উপকারিতা সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য আমাদের কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে।
ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী রান্নায় হলুদ এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত। যদিও কখনো কখনো মুখে বা গায়ে মাখার জন্য হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কারকুমিন হল সেই রাসায়নিক পদার্থ যা হলুদের হলুদ রঙের জন্য দায়ী । আধুনিক বিজ্ঞানের মতে এই কারকুমিন' আমাদের শরীরে প্রদাহ জনিত রোগ, যেমন বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ঠিক এই কারণেই কারকুমিন' সমৃদ্ধ হলুদ বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে । অর্থাৎ বাতের জন্য হলুদের ব্যবহার সুফল দিতে পারে।
বাতের ব্যথায় হলুদ ব্যবহারের সুফল সম্পর্কিত কিছু তথ্য আপনাদের জানিয়ে রাখি।
গবেষণায় উঠে এসেছে যে কারকুমিন' বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা, যেমন অস্টিওআথ্রাইটিস এর যন্ত্রণাকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করতে পারে। প্রত্যেকদিন দিনে তিনবার করে হলুদ সেবনের মাধ্যমে আমরা যতটা উপকার পেতে পারি তা প্রায় ১২০০ মিলিগ্রাম ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ পেনকিলারের (আইবুপ্রোফেন) সমতুল্য। যদিও এই সম্বন্ধে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই আমরা মনে করি।
গবেষণার মাধ্যমে আরও জানা গেছে যে হলুদের ব্যবহার রক্তে ট্রাই গ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল প্রভৃতি ক্ষতিকারক পদার্থের পরিমাণ কেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে কারকুমিন' বিভিন্ন তথাকথিত দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন, অ্যালজাইমার রোগ, ক্রোনস্ রোগ, কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদ, বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, আলসারেটিভ কোলাইটিস প্রভৃতি ক্ষেত্রে অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে ।
হলুদ ব্যবহারের আগে কিছু জিনিস আপনারা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
প্রত্যেকদিন ৮ গ্রামের বেশি হলুদ ব্যবহার বিপদজনক হতে পারে । যদিও আপেক্ষিকভাবে হলুদ একেবারেই নিরাপদ এক রাসায়নিক, তাও দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় হলুদ সেবন শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
হলুদ ব্যবহার করার আগে আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। কারণ পিত্তথলির সমস্যা, কিডনির সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধা জনিত সমস্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের রোগে হলুদের ব্যবহার বিপদজনক হতে পারে ।
প্রবন্ধ পরিবেশনায়, ডি এন সি একাডেমি।
সম্পাদনায়,ডাক্তার সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়।