DNC Health Hub.
#

লিভার ক্যান্সার( হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা)

#পেটে যন্ত্রণা,# পেটে অস্বস্তি ,# হঠাৎ ওজন হ্রাস,# জন্ডিস,# রক্তবমি,# রক্ত পায়খানা।।
হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (HCC): এক নজরে বিশ্লেষণ
 
পরিচিতি (Overview):
হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (HCC) লিভারের একটি প্রধান ধরনের ক্যান্সার। সাধারণত ক্রনিক লিভার রোগে (যেমন লিভার সিরোসিস বা হেপাটাইটিস B/C) ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই রোগ হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি । সারা বিশ্বের মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকায় HCC-এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ভারতে হেপাটাইটিস B রোগে আক্রান্ত রোগীর আধিক্য ও মদ্যপানের কারণে HCC হওয়ার ঝুঁকি পৃথিবীর অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি ।  
 
প্যাথোফিজিওলজি (Pathophysiology):
হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা(HCC) সাধারণত লিভারের কোষগুলির (হেপাটোসাইট) অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে শুরু হয়। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (হেপাটাইটিস), লিভারে আয়রন জমা (হেমোক্রোমাটোসিস), বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে লিভার সিরোসিস হলে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্যান্সার সৃষ্টি  হয়। কিছু ক্ষেত্রে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) থেকেও HCC হতে পারে এফ্লা টক্সিন হলো এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা এক বিশেষ ধরনের ছত্রাক এর শরীর থেকে নিঃসৃত হয়। কোন কারণে আমাদের শরীরে এই রাসায়নিক এর প্রবেশ ঘটলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায় ।
 
রোগের লক্ষণসমূহ (Signs and Symptoms):
 
 
লিভার ক্যান্সার অত্যন্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণ গুলো বেশ অস্পষ্ট হতে পারে।পরবর্তীতে নিম্নলিখিত উপসর্গ গুলি দেখা দিতে পারে ,
- পেটে ব্যথা (বিশেষত ডান পাশে) ।
- কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ ওজন হ্রাস।
- শারীরিক দুর্বলতা।
- পেটে জল জমে পেট ফুলে যাওয়া  (অ্যাসাইটিস) । 
- জন্ডিস (চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া)।  
- বমি বা রক্তবমি ইত্যাদি। 
 
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি (Diagnostic Approach):
 
 
 রক্ত পরীক্ষা: AFP (আলফা-ফিটোপ্রোটিন) নামক টিউমার মার্কার সনাক্ত করার পরীক্ষা করা যেতে পারে।  
 ইমেজিং: আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, বা MRI দ্বারা টিউমার শনাক্ত করা যেতে পারে।  
বায়োপসি: অন্যান্য পরীক্ষা বিশেষত আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান ইত্যাদিতে বড় ধরনের টিউমার দেখা গেলে লিভার থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।  
 
জটিলতা (Complications):
♦ লিভার ফেইলিওর এর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে । 
♦ টিউমার থেকে রক্তপাত এর মত ঘটনা ঘটতে পারে।  
♦ হেপাটিক এবং পোর্টাল শিরার মাধ্যমে ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন ফুসফুস, হাড়, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে (মেটাস্ট্যাসিস) । 
 
কখন ডাক্তার দেখাবেন ?
• দীর্ঘদিন ধরে লিভার রোগে ভুগতে থাকলে।  
 পেটে ব্যথা, ওজন কমা বা জন্ডিস এর মত সমস্যা দেখা দিলে।  
 পেট ফুলে গেলে বা রক্তবমি হলে।
 উপরের সমস্যাগুলির যেকোনো একটি দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। 
 
সাম্প্রতিক গবেষণা তথ্য (Recent Research Data):
 
 
নির্দিষ্ট কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমে টার্গেটেড থেরাপি আগামী দিনে লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে।  দুর্ভাগ্যবশত হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা এমন সময় ধরা পড়ে যখন চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি খুব একটা কাজে আসে না। সাম্প্রতিককালে অগমেন্টেড হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে ইমিউনো থেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসায় এক নতুন এবং কার্যকরী দিক এর উন্মোচন করেছে।গবেষণায় NAFLD থেকে HCC হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।  
 
উপসংহার (Conclusion):
HCC একটি মারাত্মক রোগ, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা সম্ভব। লিভার সিরোসিস, হেপাটাইটিস বি বা সি , নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিসিজ এই সমস্ত রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত চেকআপ HCC প্রতিরোধে সাহায্য করে।  ইমিউনো অনকোলজিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ক্যান্সারের চিকিৎসায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। হোমিওপ্যাথি এবং ক্যান্সার এর চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা যত এগোচ্ছে ততই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এর সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ভবিষ্যতে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।
 
প্রবন্ধ পরিবেশনায়,  ডি এন সি একাডেমি
সম্পাদনায়,ডাক্তার সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়।
 
তথ্যপঞ্জি (Reference):
1. WHO Liver Cancer Guidelines, 2023. 
2. Indian Journal of Gastroenterology, 2022. 
3. National Cancer Institute (NCI).