হাঁপানি :এক নজরে বিশ্লেষণ
পরিচিতি (Overview):
হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা জনিত রোগ। এক্ষেত্রে বায়ুপথের প্রদাহ এবং বায়ুপথ সংকোচন দেখা যায়। এই রোগ যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে। সাধারণভাবে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বারবার শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন কাশি , বুকে চাপ এই সমস্ত লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।
প্যাথোফিজিওলজি (Pathophysiology):
হাঁপানিতে বায়ুনালী (bronchial tubes) সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। কোনো উদ্দীপক পদার্থ (triggering factor) যেমন পরাগরেণু , পোষা প্রাণীর খুশকি , ধুলোবালি, উগ্র গন্ধ, ঠান্ডা অথবা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, ধোঁয়া, সালফার ডাই অক্সাইড , নাইট্রাস অক্সাইড , ভারী ধাতুর বাষ্প সহ অন্যান্য অ্যালার্জেন, শারীরিক পরিশ্রম, সংক্রমণ, মানসিক চাপ ইত্যাদি দ্বারা উদ্দীপনার ফলে বায়ুনালীতে অবস্থিত ইনফ্লামেটরি কোষ যেমন ইয়োসিনোফিল, মাস্ট কোষ, টি লিম্ফোসাইট এরা এক বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যার ফলে শ্বাসনালীর পেশি সঙ্কুচিত হয় এবং মিউকাস নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
লক্ষণসমূহ (Signs and Symptoms):
► বারবার শ্বাসকষ্ট।
► ঘন ঘন কাশি অথবা রাতের দিকে কাশি এবং শ্বাসকষ্ট।
► বুক থেকে সাঁই সাঁই শব্দ (wheezing)।
► বুকে চাপ ধরা।
► শারীরিক পরিশ্রমের কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি (Diagnostic Approach):
রোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক মূল্যায়ন একটা অত্যন্ত জরুরী পদক্ষেপ। এছাড়াও কতগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা এই রোগ নির্ণয়ে সাহায্যকারী ভূমিকা নিতে পারে যেমন:-
• স্পাইরোমেট্রি টেস্ট: এক্ষেত্রে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা মাপা হয়।
• পিক ফ্লো মিটার ব্যবহার: এর মাধ্যমে ফুসফুসের দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
• অ্যালার্জি টেস্ট: রক্তে ইমিউনোগ্লোবিউলিন (IgE), অ্যাবসোলিউট ইয়োসিনোফিল কাউন্ট ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে এলার্জি জনিত হাঁপানি সম্বন্ধে আমরা জানতে পারি।
• রেডিওলজি পরীক্ষা: বুকের এক্সরে, সিটি স্ক্যান , MRI এই সমস্ত পরীক্ষাগুলো ফুসফুসের অবস্থা জানতে সাহায্য করে।
জটিলতা (Complications):
দীর্ঘকালীন রোগভোগ এবং উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবের কারণে বেশ কতগুলো জটিলতা দেখা যায় যেমন:-
♦ ফুসফুসের কার্যক্ষমতা স্থায়ীভাবে কমে যাওয়া।
♦ বারবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া।
♦ জীবনহানির ঝুঁকি, বিশেষত অতর্কিত হাঁপানি আক্রমণ(Status asthmatics)।
♦ শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক বিকাশে বাধা।
♦ শারীরিক অসুস্থতার কারণে মানসিক দিক থেকে অন্যান্য বন্ধুবান্ধব দের থেকে দূরত্ব তৈরি হওয়া।
♦ মানসিক অবসাদ তৈরি হওয়া ইত্যাদি।
কখন চিকিৎসক এর কাছে যাওয়া উচিত ?
যদি ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট, বুকে সাঁই সাঁই আওয়াজ, অতিরিক্ত কাশি বা বুকে চাপ অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক গবেষণা তথ্য (Recent Research Data):
২০২৪ সালের একটি আইসিএমআর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে প্রায় ৩.৫ কোটি মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত। জেনেটিক প্রভাব, পরিবেশ দূষণ, এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হাঁপানি রোগে ব্যবহৃত ওষুধগুলি সাধারণভাবে কার্যকরী হলেও অত্যন্ত বেশি মাত্রার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে দীর্ঘকালীন ব্যবহারের জন্য খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে অগমেন্টেড হোমিওপ্যাথি সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন এবং কার্যকরী হওয়ায় একটা সময়োপযোগী বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে উঠে এসেছে।
উপসংহার (Conclusion):
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ হলেও যথাযথ চিকিৎসা, লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও পরিবেশগত সচেতনতা ছাড়া এটি জটিল আকার নিতে পারে। সঠিক সময়ে ডায়াগনোসিস এবং হাঁপানির উদ্দীপক পদার্থ (triggering factor)গুলোকে এড়িয়ে চলা হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। অগমেন্টেড হোমিওপ্যাথি, পজিটিভ জেনেটিক মডিফিকেশন, এলার্জেনের প্রভাবে কোষের অতি সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুনালীর দীর্ঘকালীন প্রদাহ প্রশমনের মাধ্যমে এই রোগ থেকে পাকাপাকিভাবে মুক্তি দিতে পারে। তাই সুস্থ থাকুন, ভরসা রাখুন, সঙ্গে রাখুন হোমিওপ্যাথি।
প্রবন্ধ পরিবেশনায়, ডি এন সি একাডেমি।
সম্পাদনায়,ডাক্তার সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়।